বাংলাদেশে সফররত মালয়েশিয়া মানবসম্পদ মন্ত্রীর কাছে অবৈধদের বৈধতার সুযোগ দাবী করেছেন, সেখানে থাকা অবৈধ অভিবাসীগণ।



মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী এম কুলাসেগারান বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছেন। বর্তমানে ঢাকার র‍্যাডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেন হোটেলে অবস্থান করছেন। বাংলাদেশ এবং মালয়েশিয়ার মধ্যেকার শ্রমবাজারটি আবার উম্মুক্ত করার লক্ষ্যে কয়েকটি বৈঠকে অংশ নিবেন বলে জানা গেছে।



মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত অবৈধ অভিবাসীরা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এর প্রতি জোর দাবী জানিয়েছে যে, মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী কুয়ালাসেগারান এর সাথে


বৈঠকের সময় বৈধতার সুযোগটি দেয়ার জন্য প্রস্তাব  দেয়া হয়। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশী কমিউনিটির বেশিরভাগই দীর্ঘদিন যাবত জোর দাবী জানিয়ে আসছেন যেন বৈধতার সুযোগ আবার দেয়া হয়।

মালয়েশিয়ায় বসবাসরত প্রবাসীদের একটি অংশ চান যে, কলিং ভিসা চালু না করে বৈধতার সুযোগ দেয়া হোক আবার আরেকটি অংশ চান যেন কলিং ভিসাটা চালু হোক। তবে বেশিরভাগ প্রবাসীই চান যে বৈধতার সুযোগটি যেন আগে দেয়া হয়। মালয়েশিয়ায় বিভিন্ন কারণে অবৈধ হয়ে যাওয়া অভিবাসীরা বহুদিন থেকে অবৈধদেরকে বৈধ হওয়ার সুযোগ দেয়ার দাবী জানিয়ে আসছেন।


ফ্ল্যাশব্যাক, জরুরি তথ্যঃ

বৈধ হওয়ার জন্য রিহায়ারিং এর কার্যক্রম আড়াই বছর ধরে চলছিল।  মালয়েশিয়ায় অবৈধভাবে অবস্থানকারী অভিবাসীদের বৈধ হওয়ার সুযোগ দেয়া হয়েছিল ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে যা প্রথমে ৬ মাস এবং এরপরে ৬ বাড়িয়ে ২০১৮ সালের জুন মাস পর্যন্ত দীর্ঘমেয়াদে পরিচালিত হয়। আর অবৈধদেরকে বৈধ হওয়ার জন্য বা বিভিন্ন কোম্পানিতে পুনরায় ভিসা করিয়ে নেওয়ার জন্য সেদেশের কোম্পানিগুলোকে আহ্বান জানানো হয়।

এই রিহায়ারিং কার্যক্রমটি পরিচালনা করার জন্য মালয়েশিয়ার ৩ টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠানটির নাম হচ্ছে মাই'ইজি এবং আরেকটি হল বুকতি মেঘা অন্যান্য হল ইমান। এই ৩ টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নিয়োগকর্তা বা কোম্পানির মালিকেরা অবৈধ শ্রমিকদের বৈধ করার জন্য সমস্ত ফাইল ও প্রয়োজন তথ্য প্রদান করে।

এই রিহায়ারিং প্রক্রিয়ার মাধমে ভিসা পাওয়ার জন্য অবৈধ অভিবাসীরা প্রতিটি রেজিষ্ট্রেশন এর জন্য কোম্পানির মাধ্যমে মাই'ইজিকে ৯২২.৫২ রিঙ্গিত প্রদান করেছিল যা হিসেব অনুযায়ী সর্বমোট প্রতিটি শ্রমিকের জন্য ৪৫১৩.৮৬ রিঙ্গিত অনলাইন পেমেন্ট হিসেবে পরিশোধ করেছিল। মালয়েশিয়ার শ্রম অধিকার সংস্থা তেনাগানিতার প্রতিবেদন অনুযায়ী
এই তিনটি প্রতিষ্ঠানের আন্ডারে প্রায় ৭ লক্ষ ৪৪ হাজার অবৈধ অভিবাসী বৈধ হওয়ার জন্য প্রাথমিকভাবে প্রায় ১০০০-২০০০ রিঙ্গিত ফি জমা দিয়ে রেজিষ্ট্রেশন করেন। এর মধ্যে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার অবৈধ অভিবাসী ভিসা পায়। বাকি প্রায় ৫ লাখেরও বেশি শ্রমিক ভিসা পায়নি।

এই রিহায়ারিং এর কার্যক্রম শেষ হওয়ার ২০১৯ সালের ১লা আগস্ট থেকে দেশটিতে থাকা অবৈধদের তাদের নিজ দেশে ফেরত যাওয়ার সুযোগ দেয়া হয়। অবশ্য এর আগে বিভিন্ন দেশের হাইকমিশন ও কূটনীতিকদের জোর দাবী ছিল বৈধতার সুযোগটি আরেকবার দেয়ার জন্য কিন্তু মালয়েশিয়ার সংসদে এই দাবী উত্থাপিত হলে নাখচ করে দেয়া হয়। কারণ হিসেবে বলা হয় বারবার বৈধতার সুযোগ দেয়া হলে শ্রমিকদের মাঝে অবৈধ হয়ে যাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যাবে।

নিয়োগকর্তা বা ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানগুলো আর্থিক ও শ্রমিক সংকটে পড়ে যাবে। তাই মালয়েশিয়ার সংসদে এমন দাবী বারবার করা হলেও সেটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী মুহিউদ্দিন ইয়াসিন সরাসরি নিষেধ করে দিয়ে বলেছেন, বৈধতার কোন সুযোগ আর নয় বরং মালয়েশিয়াকে অবৈধ অভিবাসী মুক্তা করা হবে সেই লক্ষ্যে কাজ করছে মন্ত্রণালয়।

No comments

Theme images by Dizzo. Powered by Blogger.