সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশীদের ভয়াবহ অবস্থা, আজ আরও ১১৮ জন সহ ৩৬২ জন কর্মী আক্রান্ত।

সিঙ্গাপুরে গত ১ সপ্তাহের ব্যবধানে হুহু করে বেড়েই চলেছে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ। প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। বর্তমানে আক্রান্তদের বেশিরভাগই বাংলাদেশি।


সিঙ্গাপুরে অভিবাসী কর্মীদের বসবাসের ব্যবস্থা খুবই নগন্য, ছোট্ট রুমে থাকতে হয় গাদাগাদি করে, কোথাও এক রুমে ১০-২০ জন পর্যন্ত থাকে। বাংলাদেশী প্রবাসীদের জন্য সিঙ্গাপুর মনে হয় আরেকটি নরক।  বড় বড় ডরমিটরি বা হোস্টেলগুলো  বসবাসের অযোগ্য। শুধুমাত্র একটু ভালো বেতন পায় কর্মীরা, অন্যান্য দেশের তুলনায় বেতনের বিষয়টি ভাল বিধায় এত কষ্ট মেনে নিয়ে দিনের পর দিন জীবন ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে প্রবাসীরা।

প্রতিদিনের মত আজও সিঙ্গাপুর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ঘোষণা করছে নতুন আক্রান্তদের সংখ্যা, আজ বৃহস্পতিবার (৯ই এপ্রিল) একদিনে সর্বোচ্চ সংখ্যক ২৮৭ জন আক্রান্ত হওয়ার খবর প্রকাশ করেছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যার ফলে সিঙ্গাপুরে এখনো পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১৯১০ জনে পৌঁছেছে।

সিঙ্গাপুরে আজকের আক্রান্তদের মধ্যে ১১৮ জনই বাংলাদেশী যার ফলে এই পর্যন্ত মোট ৩৬২ জন বাংলাদেশী আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে আজ আরও ৫৪ জন সুস্থ হয়েছেন যার ফলে এই পর্যন্ত সুস্থতার সংখ্যা ৪৬০ জনে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। সুস্থ হওয়া সবাইকেই হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেয়া হয়েছে।

আক্রান্ত ২৮৭ জনের মধ্যে তিনজন বাইরের দেশ থেকে এসেছে। ২৮৪ জন স্থানীয়ভাবে আক্রান্ত হয়েছে৷ ২১৯ জন পূর্বের ক্লাস্টারের কিংবা রোগীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের ফলে আক্রান্ত হয়েছে। এরমধ্যে ২০০ জনই অভিবাসী কর্মীদের থাকার জায়গা ডরমিটরি বা হোস্টেলের সাথে লিংক রয়েছে। আজকে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন এস ১১ ডরমেটরি @ পুংগল, টেম্পানিস ডরমেটরি, তোহ গুয়ান ডরমেটরি, সুনেগেই টেংগা লজ, কোচরেন লজ দ্বিতীয় থেকে৷ ১৯ জন পূর্বের রোগীদের সাথে লিংক রয়েছে। ৪৮ জন ঠিক কোথায় আক্রান্ত হয়েছে সেই তথ্য এখনো অজানা রয়েছে।

৮৮৪ জন এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন৷ ২৯ জনের অবস্থা গুরুতর। তাদেরকে আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে৷ ৫৫৯ জনের অবস্থা ক্লিনিক্যালি ভালো কিন্তু পরীক্ষায় করোনাভাইরাস পজিটিভ হওয়ায় তাদেরকে অন্য রোগীদের কাছ থেকে আলাদা রাখা ও যত্নের জন্য কনকর্ড ইন্টারন্যাশনাল হাসপাতাল, মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতাল, গ্লেনেগল হাসপাতাল এবং দ্য কমিউনিটি আইসোলেশন ফ্যাকাল্টি অ্যাট ডিজোর্টে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

 বর্তমানে সিঙ্গাপুরের অভিবাসী কর্মীদের হোস্টেল গুলোর অবস্থা খুবই আশংকা জনক। ইতিমধ্যেই ২ টি ডরমিটরিতে প্রায় ২০ হাজার কর্মীকে একসাথে কোয়ারেন্টাইন করে রাখা হয়েছে। কিন্তু ২০ হাজার কর্মীদের মধ্যেও ভাইরাস বহনকারী থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন সেখানে বসবাসকারী একজন৷ একই ভবনে কয়েক হাজার বিদেশি কর্মীর বসবাস যেখানা একটা রুমেই ১০-১৫ জন থাকে গাদাগাদি করে। তবে এই দুই ডরমিটরিতে থেকে আরও বিপুল সংখ্যক আক্রান্তের আভাস পাওয়া গেছে।

সিঙ্গাপুরে প্রায় ২০ লাখ অভিবাসীর
বেশিরভাগই নির্মান শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন৷ যাদের বেশিরভাগ জীবন আজ হুমকির মুখে।  সিঙ্গাপুর সরকারের অব্যবস্থাপনা আর বেখেয়ালি মনোভাবের কারণেই আজ এমন উদ্ভুত পরিস্থিতির জন্ম হয়েছে। শ্রমিক কমিউনিটি বা এনজিও কিংবা বড় বড় গণমাধ্যম গুলোতে শ্রমিকদের বসবাসের পরিবেশ নিয়ে বারবার বিভিন্ন সময়ে আলোচনা, সমালোচনা হলে টনক নড়েনি কর্তৃপক্ষের।  অযত্ন, অবহেলা আর কোম্পানিদের চাপিয়ে দেয়া বসবাসের পরিবেশই আজ কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।

No comments

Theme images by Dizzo. Powered by Blogger.